আমি নিজে মোটামুটি গড়পড়তা বাংলাদেশী। ২০% আবেগ ২০% যুক্তি ১০% প্রেম আর ৫০% আশা দিয়ে তৈরি চলনসই বঙ্গসন্তান।
তনু বা রিশার জন্য ভার্সিটির সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে
দাঁড়িয়েও আমার চোখ ভেজে, যখন মুস্তাফিজ কারো স্টাম্প উড়ায়া ফেলে তখন "বাংলাদেশ" বইলা চিৎকার কোইরা গলা ভাইঙ্গা ফেলি আবার মাশরাফির বোলিঙের সময় পা পিছলায়া পোইরা গেলে সবার মত
আমারও বুকের মদ্ধে চিন কোইরা ওঠে এই মনে হয় আবার “ ইনজুরি ”!
মুসা ইব্রাহীম ওয়াসফিয়া নাজরিনরা
যখন প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এভারেস্ট জয় করে,জাহিদ হাসান যখন প্রিন্সটন
ইউনিভার্সিটির ল্যাবরেটরিতে তার আবিষ্কার দিয়া সারা পৃথিবীরে তাক লাগায়া দেয় বা
খান একাডেমীর সালমান খান যখন বিনা মূল্যে শিক্ষাকে সারা বিশ্বব্যাপী ছরায়া দেয় তখন আমি ওইটার ছবি শেয়ার দিয়া বলি -
"হ্যাঁ আমি বাংলাদেশী হয়ে গর্বিত"
আবার কোন দেশদ্রোহী বা রেপিস্টের কথা শুনলে গালি দিয়া বলি
"হারামিটারে সামনে পাইলে কাইটা ফেলতাম"।
দেশ নিয়া আমি খুবই আশাবাদী। শেয়ারবাজারে কত হাজার টাকা লুট হইল সেইটার চেয়ে পদ্মা সেতু
বা মেট্রো রেল হইতাসে এইটা নিয়ে গর্ব করি।দেশ দুর্নীতিতে ভরে গেছে এইটা শোনার চেয়ে কিছু যুবক নিজেদের সমাজকে পরিবর্তনের লক্ষে গ্রামের অশিক্ষিত
মানুষদের বিনা পয়সায় শিক্ষা দিচ্ছে এইটা শুনতে আমার বেশি ভাল লাগে।
যখন শুনি স্বাধীনতার জন্য ৩০ লক্ষ মানুষ
নিজেদের জীবন দিয়েছে, বাংলা ভাষার জন্য রফিক জব্বাররা নিজেদের জীবন দিয়ে ভাষাকে
রক্ষা করেছে, গণতন্ত্রের জন্য নূর হোসেন নির্ভয়ে নিজের বুকে বন্দুকের গুলি গেঁথেছে, আর তাদের এই বীরত্ব শুনে আমার পশম দাঁড়ায়া যায় তখন আমি ভাবি-"বাংলাদেশী হিসেবে জন্ম নেয়াটা আসলে খুব বাজে কিছু না"।
যখন দেখি যুব সমাজ টাকার পিছে না ছুইটা ভাল
কাজের দিকে ছুটতাছে, যখন দেখি মেধাবীরা সাধারণ স্কুল শিক্ষকের অসাধারণ চাকরিটা খুশি মনে
নিয়া সমাজের মেরুদণ্ড তৈরি করতাছে কিংবা মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়ছে, সাকিব অশ্বিনরে টপকায়ে আবার নাম্বার ওয়ান হয়ে গেছে তখন আমি বুকের বামপাশে হৃদপিণ্ডের উপরে হাত দিয়া বলি - আমার বাংলাদেশ আগাইতাছে।
মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুরের মত না পারলেও আমার বাংলাদেশ বাংলাদেশের মত করে আগাইতাছে।
আমি বাংলাদেশী। আমার দাদা এই মাটিতে লাঙ্গল চাষ দিছে, আমার বাবা এই পানিতে সাঁতার কাটছে, আমি এই বাতাস বুকে নিয়া কাঁদার মধ্যে ফুটবল খেইলা বড় হইছি।
আমি কেন এতটা আবেগ দেখাই আমার দেশ নিয়ে?
কারন একটাই- "কারণ আমি বাংলাদেশী"।
এইটা খারাপ কিছু হতে পারে, আমার দেশটা অন্য দেশের চেয়ে একটু কম আগাইতে পারে। তবে আমি এইটা জানি, দুনিয়ার অন্য কোন দেশ ভাষার জন্য রক্ত দেয়নাই, অন্য কোন জাতি স্বাধীনতার জন্য এভাবে জীবন দেয়নাই।
ঠিক কোন দেশে নাড়ির টানে ঈদ করতে ২০০০ জনের ট্রেনে ৭০০০ জন ঝুলে ঝুলে ঢাকা থেকে রাজশাহী ৩০০ কি.মি. পাড়ি দেয় কিংবা ৮০০ জনের লঞ্চে ৩০০০ জন জীবনের ঝুকি নিয়ে সাগর পারি দেয় আমি জানিনা।
জানি না অন্য কোন দেশের মানুষ এত সহজ সরল হয় কিনা, দুর্ঘটনায় কবলিত
কোন মানুষকে মা বাবা ভাই বোন ভেবে নিজের কোলে তুলে হাসপাতালের দিকে দৌড়ায় কিনা, কিংবা খালি হাতে রানা প্লাজার মত জাহান্নাম থেইকা এত্ত
গুলা প্রান বাঁচায় কিনা।
আমি জানিনা অন্য কোন দেশ খেলায় হারলে রাতের ভাত রাগ করে রেখে দেয় কিনা কিংবা
সাকিব মাশরাফিদের মত চোখের পানি পরে কিনা, আমি জানিনা তারা প্রথম প্রেমিকারে ভালবেসে চিরকুমার থাকে কিনা?
তবে আমি জানি এইসবই একসাথে হয় দুনিয়ার একটামাত্র দেশে - সে দেশটার একটা লাল সবুজ পতাকা আছে; সে দেশের জাতীয় সঙ্গীতের প্রথম দুইটা লাইন-" আমার সোনার বাংলা ,আমি তোমায় ভালবাসি"