Friday 24 February 2017

শ্রেষ্ঠ সম্পদ অথবা দু’মুঠো ভাত

কেউ বলে রিকশার শহর কেউ বলে মসজিদের শহর আবার কেউবা দালানকোঠার।

কিন্তু লোকমুখে শোনা যায় এই শহরে টাকা ওরে!!

কিন্তু সবাই ধরতে জানে না আবার অনেকে ধরলেও কেওবা সঠিক পথে কেওবা বেঠিক পথে। 

সঠিক পথে টাকা ইনকাম মানুষ সমাজের সামনেই ঘটে কিন্তু যারা 
সঠিক পথে টাকা ইনকাম করে না তাদের??
-বলতে পারি এটাও সবার সামনেই ঘটে এই যেমন ছিনতাই ডাকাতি ঘুষ ইত্যাদি।


আবার এই শহরে গোপনে অবৈধ টাকা ইনকামের অনেকগুলা 
রাস্তার মধ্যে পতিতাবৃত্তি বা দেহ ব্যবসাও একটা রাস্তা। আদিম যুগ থেকেই এই ব্যবসার জনপ্রিয়তা অধিক আর এই সময়েও থেমে নেই।


রাত প্রায় দশটা। 
মিরপুর ১০ নম্বর ওভারব্রিজ পার হচ্ছি সাথে চারজন বন্ধু মানে সবমিলিয়ে পাঁচ জন, ব্রিজে ওঠার সময়ও দেখলাম বেশকিছু বোরকা পরা মহিলা ঘুরাফেরা করছে আর ব্রিজের উপর দিয়ে আমরা পাঁচজন আড্ডা দিতে দিতেই হাঁটছিলাম। ব্রিজের মাঝে জায়গাটা একটু বড় আর ওখানেই দুজন বোরখা পরা মহিলা আমাদের উদ্দেশে বলল “যাবে নাকি”?


আমি একটু ভয় পেলেও আমার দুজন বন্ধু বেশ হাসাহাসি করতে 
করতে আমাদের সাথে নিচে নামলো আর সেই মহিলাদের 
ব্যাপারটা খুলে বলল। আর এও বলল জিয়া উদ্যানে যে সকল 
মহিলারা এমন বোরকা পরে ঘোরাফেরা করে তারাও এমন টাইপের মানে সোজাসুজি বলতে গেলে “পতিতা”।

 সত্তিই তাই, জিয়া উদ্যানে সন্ধ্যার পর তাদের আনাগোনা দেখতাম। 
এখন ভার্সিটির বন্ধুদের সাথে মানিকমিয়া এভিনিউ মানে সংসদের দক্ষিন পাশে আড্ডা দেই, যায়গাটা বেশ ভালোই মানে পরিষ্কার পরিছন্ন আর আড্ডা ভালোই হয়। কিন্তু এখানেও খেয়াল করলাম এমন বেশ কিছু মহিলার আনাগোনা আর সেটা সন্ধ্যা বা রাতে না দিনদুপুরে!!

এমনকি পুলিশের সামনেই!!

 সত্যি কথা বলতে এই সকল মহিলাদের নিয়ে আমার মনে অনেক রকম প্রশ্ন ঘুরপাক খায় কিন্তু বলার সাহস পাইনা। এত এত পেশা থাকতে তারা কেন এই পেশায়?তাদের নিয়ে অনেক হাসাহাসি হয় এমনকি আমিও বাদ যাইনি, কিন্তু একটু গভির ভাবে ভাবতে গেলে হাসির কিছু পাই না!  

পথে নিরেট শরীরের টানে আসে যারা তারা উপর তলার নারী 
তারা পতিতা নয়, উপর শ্রেণির লোকেরা তাদের সোহাগ করে বলেসোসাইটি গার্ল অবশ্য এদেরকেও বেশী দোষ দেয়া ঠিক না কারণ তারাও আমাদের সমাজের পয়জন থেকে তৈরি
 হেমলক সমাজের ভুলভুলাইয়ার জালে ফেঁসে যাওয়া নারী এদের 
বেশিরভাগই প্রচণ্ড রকমের মেধাবী

সেলিব্রিটি সেজে বন্ধুদের টেক্কা দেবার বাসনায়, ভালো 
ইউনিভার্সিটিতে স্ট্যাটাস বজায় রাখার অভীপ্সায় কোনো কুক্ষণে এরা আলোর ঝলকানির মোহে পড়ে যায় প্রথমে নাইট বারে সীসা চিবিয়ে, তারপর নাইট ক্লাবের মদমত্ত জলসায় উদ্দাম ড্যান্স করে আস্তে আস্তে নামীও বন্ধুদের ফ্ল্যাট!!

 আরেক শ্রেণি আছে যাদের এই পেশায় আসার জন্য তাদের থেকে এই সমাজের 
দায় টাই বেশি। এদের সংজ্ঞাটা এমন

আমি আপনাকে নারী জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ দেবো বিনিময়ে আপনি আমাকে দুমুঠো ভাতের পয়সা দিতে পারবেন না?  

 স্বামীর সাথে ডিভোর্স,প্রেমিকের ফাদে পরে,আবার বিদেশে নিয়ে 
যাওয়ার নাম করে পতিতালয়ে বিক্রি এমন ঘটনাই বেশী শোনা যায়। আর পতিতালয়ে একবার বিক্রি হলে সেখান থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। কেও যদি অনেক কষ্টে বেরও হয় তখন তাকে আর তার পরিবার সামাজিকতার ভয়ে মেনে নেয়না;

শেষমেশ কোন উপায় না দেখে আবার সেই রাস্তায় নামতে হয়!! তাহলে এই মেয়েটার ভাগ্য এমন হওয়ার জন্য কে দায়ী??
অবশ্যই এই সমাজ কারন পৃথিবীতে কেও প্রতিতা হিসেবে জন্ম নেয়না
 

শহরে তো রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলে কেবল বাড়িওয়ালা আর ভাড়াটিয়াদের। এর বাইরে যে নারীই মাথা রাখে পিচ ঢালা পথের ফুটপাতে, কমলাপুর রেল স্টেশনে, সদরঘাটের পন্টুনে তাদের দায়িত্ব কে নিবে??


সবার মত আমিও জানি এই সকল পতিতাদের জন্য সমাজ কুলসিত হয় বা যুব সমাজের অবক্ষয় হয়। কিন্তু এদের মধ্যে বেশিভাগই এসেছে পেটের ক্ষুধায়, কে বা কারা তাদের ক্ষুধা নিবারণ করবে?

কেও যদি পতিতা হয়ে জন্ম না নিয়ে পতিতা হয়ে মৃত্যু বরন করে তাহলে দোষটা কার?? 

Saturday 18 February 2017

সিটিং সার্ভিস


উত্তরায় কিছু বন্ধুবান্ধব থাকায় মাঝেমধ্যেই ওই দিকে যেতে হয়, মিরপুরে থাকি তাই কালশি হয়ে যাতায়াতের রাস্তাটা ভালোই আর বাসও অনেক।

কিন্তু মেইন প্রবলেমটা হল সিটিং সার্ভিস!! সিটিং সার্ভিস মানে আমরা বুঝি বাড়তি প্যাসেঞ্জারের ঝামেলা নাই,এক একটি সিটের জন্য একজন করে প্যাসেঞ্জার,সিট ছাড়া বাড়তি কোন প্যাসেঞ্জার বাসের মধ্যে দাঁড়াইয়া বা ঝুলে থাকবে না আর প্যাসেঞ্জার ফুল হয়ে গেলে বাসের গেট বন্ধ এরই নাম সিটিং সার্ভিস। কিন্তু ঢাকা শহরের বেশী ভাগ সিটিং সার্ভিস বাস গুলাই এর ধার ধারেনা বিশেষ করে মিরপুর টু কালশি হয়ে উত্তরা গামী বাস গুলো।

 এই রুটে যে বাসের সংখ্যা কত সেটা মনে হয় মালিক পক্ষও জানে না। যাত্রি থাক আর না থাক মিরপুর দশ নাম্বার ফায়ার সার্ভিসের সামনে কম হলেও ১০-১২ টা বাস সবসময় দাড়িয়ে থাকে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জাবালে নুর,তেতুলিয়া,প্রজাপতি,বসুমতী ইত্যাদি।

 এই বাস গুলার মধ্যে সব গুলাই আবার সিটিং সার্ভিস!! এরা সিটিং সার্ভিসের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিন্তু দেখার যেন কেও নেই!!

আগারগাও থেকে তেতুলিয়া পরিবহণের একটি বাসে উঠলে তালতলা শ্যাওড়াপাড়া কাজিপারা 
মিরপুর ১০,১১,১২ পূরবী কালশি ইসিবি চত্বর এমন কোন স্ট্যান্ড নাই যে এরা থামে না। আর মহা বিরক্তি শুরু হয় খিলখেত থেকে, মানুষ যেন কাঁধের উপর ওঠে!! কোন সিট ফাকা না থাকা সত্তেও বাস থামিয়ে ডেকে ডেকে মানুষ তোলে যেন মিরপুর টু আজিমপুর গামি ৭ নাম্বার বাস!! 

শুধু কুরিল ফ্লাইওভারের উপরে এদের সিটিং সার্ভিস বজায় রাখে, যাত্রি পেলে এই জায়গাটাও বাদ যেত না।
 এটা শুধু তেতুলিয়া পরিবহণের ক্ষেত্রে না এই রুটের প্রতিটি বাস সার্ভিসই এমন। এরা স্টুডেন্ট 
ভাড়া মানে না বাসে পা দিলেই যেন ৩০ টাকা!! 
বেশকিছু জায়গায় এদের চেকার নামক ধান্দাবাজ দাঁড়ানো থাকে যাদের হাতে ১০-১৫ টাকা ধরায়ে দিয়ে বাসের হেল্পার যাত্রীদের পকেট কাটা শুরু করে।  
৪০-৫০ জন যাত্রির সময় বা টাকার মূল্য এদের কাছে কিছুই না। এরা শুধু নিজেদের আঁখের গুছাতে বেস্ত।

সবাই দেখতেছে সবাই বুঝতেছে কিন্তু কেও কিছু বলতে বা করতে পারছে না কারন আমার মত সাধারণ যাত্রীরা এদের কাছে কিছুই না। 

Saturday 4 February 2017

নির্মম সত্য

যখন হারিয়ে যাব কাফনের মিছিলে,
বিকৃত চেহারা আর উৎকট গন্ধে নাক সিঁটকে পালাবি তুই ও।

রঙিন কাপড়ে তোকে অনেক দেখিছি কিন্তু কখনো ভাবিনি সাদা কাপড় দেখে এমন পাল্টে যাবি তুই।আজ তুই নির্মম সত্য কে মেনে  নিতে পারলি না!! 



Wednesday 1 February 2017

গর্বিত আমি বাংলাদেশী

আমি নিজে মোটামুটি গড়পড়তা বাংলাদেশী। ২০% আবেগ ২০% যুক্তি ১০% প্রেম আর ৫০% আশা দিয়ে তৈরি চলনসই বঙ্গসন্তান।

তনু বা রিশার জন্য ভার্সিটির সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েও আমার চোখ ভেজে, যখন মুস্তাফিজ কারো স্টাম্প উড়ায়া ফেলে তখন "বাংলাদেশ" বইলা চিৎকার কোইরা গলা ভাইঙ্গা ফেলি আবার মাশরাফির বোলিঙের সময় পা পিছলায়া পোইরা গেলে সবার মত আমারও বুকের মদ্ধে চিন কোইরা ওঠে এই মনে হয় আবার “ ইনজুরি ”!
মুসা ইব্রাহীম ওয়াসফিয়া নাজরিনরা যখন প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এভারেস্ট জয় করে,জাহিদ হাসান যখন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ল্যাবরেটরিতে তার আবিষ্কার দিয়া সারা পৃথিবীরে তাক লাগায়া দেয় বা খান একাডেমীর সালমান খান যখন বিনা মূল্যে শিক্ষাকে সারা বিশ্বব্যাপী ছরায়া দেয় তখন আমি ওইটার ছবি শেয়ার দিয়া বলি - "হ্যাঁ আমি বাংলাদেশী হয়ে গর্বিত"

আবার কোন দেশদ্রোহী বা রেপিস্টের কথা শুনলে গালি দিয়া বলি "হারামিটারে সামনে পাইলে কাইটা ফেলতাম"

দেশ নিয়া আমি খুবই আশাবাদী। শেয়ারবাজারে কত হাজার টাকা লুট হইল সেইটার চেয়ে পদ্মা সেতু বা মেট্রো রেল হইতাসে এইটা নিয়ে গর্ব করি।দেশ দুর্নীতিতে ভরে গেছে এইটা শোনার চেয়ে কিছু যুবক নিজেদের সমাজকে পরিবর্তনের লক্ষে গ্রামের অশিক্ষিত মানুষদের বিনা পয়সায় শিক্ষা দিচ্ছে এইটা শুনতে আমার বেশি ভাল লাগে।

যখন শুনি স্বাধীনতার জন্য ৩০ লক্ষ মানুষ নিজেদের জীবন দিয়েছে, বাংলা ভাষার জন্য রফিক জব্বাররা নিজেদের জীবন দিয়ে ভাষাকে রক্ষা করেছে, গণতন্ত্রের জন্য নূর হোসেন নির্ভয়ে নিজের বুকে বন্দুকের গুলি গেঁথেছে, আর তাদের এই বীরত্ব শুনে আমার পশম দাঁড়ায়া যায় তখন আমি ভাবি-"বাংলাদেশী হিসেবে জন্ম নেয়াটা আসলে খুব বাজে কিছু না"

যখন দেখি যুব সমাজ টাকার পিছে না ছুইটা ভাল কাজের দিকে ছুটতাছে, যখন দেখি মেধাবীরা সাধারণ স্কুল শিক্ষকের অসাধারণ চাকরিটা খুশি মনে নিয়া সমাজের মেরুদণ্ড তৈরি করতাছে কিংবা মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়ছে, সাকিব অশ্বিনরে টপকায়ে আবার নাম্বার ওয়ান হয়ে গেছে তখন আমি বুকের বামপাশে হৃদপিণ্ডের উপরে হাত দিয়া বলি - আমার বাংলাদেশ আগাইতাছে।
মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুরের মত না পারলেও আমার বাংলাদেশ বাংলাদেশের মত করে আগাইতাছে।

আমি বাংলাদেশী। আমার দাদা এই মাটিতে লাঙ্গল চাষ দিছে, আমার বাবা এই পানিতে সাঁতার কাটছে, আমি এই বাতাস বুকে নিয়া কাঁদার মধ্যে ফুটবল খেইলা বড় হইছি।

আমি কেন এতটা আবেগ দেখাই আমার দেশ নিয়ে?
কারন একটাই- "কারণ আমি বাংলাদেশী"।
এইটা খারাপ কিছু হতে পারে, আমার দেশটা অন্য দেশের চেয়ে একটু কম আগাইতে পারে। তবে আমি এইটা জানি, দুনিয়ার অন্য কোন দেশ ভাষার জন্য রক্ত দেয়নাই, অন্য কোন জাতি স্বাধীনতার জন্য এভাবে জীবন দেয়নাই।
ঠিক কোন দেশে নাড়ির টানে ঈদ করতে ২০০০ জনের ট্রেনে ৭০০০ জন ঝুলে ঝুলে ঢাকা থেকে রাজশাহী ৩০০ কি.মি. পাড়ি দেয় কিংবা ৮০০ জনের লঞ্চে ৩০০০ জন জীবনের ঝুকি নিয়ে সাগর পারি দেয় আমি জানিনা।

জানি না অন্য কোন দেশের মানুষ এত সহজ সরল হয় কিনা, দুর্ঘটনায় কবলিত কোন মানুষকে মা বাবা ভাই বোন ভেবে নিজের কোলে তুলে হাসপাতালের দিকে দৌড়ায় কিনা, কিংবা খালি হাতে রানা প্লাজার মত জাহান্নাম থেইকা এত্ত গুলা প্রান বাঁচায় কিনা
আমি জানিনা অন্য কোন দেশ খেলায় হারলে রাতের ভাত রাগ করে রেখে দেয় কিনা কিংবা সাকিব মাশরাফিদের মত চোখের পানি পরে কিনা, আমি জানিনা তারা প্রথম প্রেমিকারে ভালবেসে চিরকুমার থাকে কিনা?

তবে আমি জানি এইসবই একসাথে হয় দুনিয়ার একটামাত্র দেশে - সে দেশটার একটা লাল সবুজ পতাকা আছে; সে দেশের জাতীয় সঙ্গীতের প্রথম দুইটা লাইন-" আমার সোনার বাংলা ,আমি তোমায় ভালবাসি"