Saturday 8 April 2017

খ্যাতের দল...

ঢাকায় নতুন আসা ছেলেমেয়েদের আড়ালে আবডালে খ্যাত বলে অনেকেই পৈশাচিক আনন্দ পায়...ঢাকার শিক্ষিত স্মার্ট ছেলে মেয়েদের কাছে তাদের সব কিছুই যেন দৈনতা রূপে প্রকাশ পায়!


তাদের কথায় একটা আঞ্চলিক টান থাকে... ইংরেজীতে আড়ষ্টতা থাকে, চেহারা ছবিতে লেগে থাকে বিস্ময়...আর শহরের ছেলেমেয়েদের মত করে কথা বলতে গেলে সমস্যাটা আরো বিকট হয়…

শুধু কথায় নয়, তাদের টান থাকে পকেটেও... নানা লাইফস্টাইলের এই ঢাকা শহরে পকেটের সে টান তাদের নিয়ে যায় এলাকার কোন বড় ভাইয়ের শেয়ারিং বেড, মেস কিংবা সাবলেট রুমে।


হোটেলে গিয়ে সকালের ব্রেকফাস্ট দুপুরের লাঞ্চ বা রাতের ডিনার শব্দ গুলির সাথে তাদের পরিচয় নেই বললেই চলে।

বাসায় কাজের বুয়া না আসলে সবাই মিলে রান্না করা আর স্যাঁতস্যাঁতে রুমের ভাঙ্গা মেঝেতে বসে খাওয়াটাও এদের নিয়মিত কাজ……কাঁটা চামচে খাওয়ার অভ্যাস তাই হয়না, যে অভ্যাসটা হয় তা হল ভাগাভাগি করে বাঁচতে শেখা...



বিশাল শপিং মলের গ্রাউন্ড ফ্লোরে দাড়িয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে থেকে ওদের ঘাড় 
লেগে যায়, চলন্ত সিড়িতে পা রাখতে গিয়ে হিমশিম খায়..ওরা জানে পেছন থেকে 
কেউ হয়তো হেসে উঠছে খ্যাত বলে……! 



ওদের সমস্যা অনেক...ওরা এটা জানেনা, সেটা বোঝেনা...ওরা বড্ড বেমানান...

ওরা শব্দ করে চা খায়…অরা ছোট খাট জিনিস নিয়েও দামাদামি করে……ওরা খাওয়ার 
শেষে হোটেলের ছেলেটাকে বকশিস দিতে যানে না…

ভ্রু কুঁচকানো এমন অনেক অবজ্ঞা ওরা দেখে, শোনে তারপরেও দাঁত কামড়ে লেগে 
থাকে... কারণ মফঃস্বলের বাতাস ওদের বলে দিয়েছেকিছু একটা করতেই হবে 

আর হৃদয়ে সদা বাঁজতে থাকে অসহায় বাবার কষ্টাসিক্ত সেই কথা "আর কতদিন বাজান"!! 


.
প্রিয় মুখগুলো বাড়িতে ফেলে এসে এই শহরে রোদে পুড়ে, রাস্তার ধুলা খেয়ে, মানুষের
অবহেলা বুক পকেটে জাপটে রেখেই ওরা তরতর করে এগোতে থাকে...
অসীম সহ্যক্ষমতা ওদের বুকে জন্ম দিয়েছে হার না মানা জিদ... 

শহরটা একদিন ঠিকই চাবুক পিটিয়ে শাসন করে একসময়ের খ্যাতের দল...
করতালিটুকু তোলা থাকে তাদের জন্যই...

যেদিন খ্যাত থেকেই ওরা খ্যাতনামা হবে.......




Friday 24 February 2017

শ্রেষ্ঠ সম্পদ অথবা দু’মুঠো ভাত

কেউ বলে রিকশার শহর কেউ বলে মসজিদের শহর আবার কেউবা দালানকোঠার।

কিন্তু লোকমুখে শোনা যায় এই শহরে টাকা ওরে!!

কিন্তু সবাই ধরতে জানে না আবার অনেকে ধরলেও কেওবা সঠিক পথে কেওবা বেঠিক পথে। 

সঠিক পথে টাকা ইনকাম মানুষ সমাজের সামনেই ঘটে কিন্তু যারা 
সঠিক পথে টাকা ইনকাম করে না তাদের??
-বলতে পারি এটাও সবার সামনেই ঘটে এই যেমন ছিনতাই ডাকাতি ঘুষ ইত্যাদি।


আবার এই শহরে গোপনে অবৈধ টাকা ইনকামের অনেকগুলা 
রাস্তার মধ্যে পতিতাবৃত্তি বা দেহ ব্যবসাও একটা রাস্তা। আদিম যুগ থেকেই এই ব্যবসার জনপ্রিয়তা অধিক আর এই সময়েও থেমে নেই।


রাত প্রায় দশটা। 
মিরপুর ১০ নম্বর ওভারব্রিজ পার হচ্ছি সাথে চারজন বন্ধু মানে সবমিলিয়ে পাঁচ জন, ব্রিজে ওঠার সময়ও দেখলাম বেশকিছু বোরকা পরা মহিলা ঘুরাফেরা করছে আর ব্রিজের উপর দিয়ে আমরা পাঁচজন আড্ডা দিতে দিতেই হাঁটছিলাম। ব্রিজের মাঝে জায়গাটা একটু বড় আর ওখানেই দুজন বোরখা পরা মহিলা আমাদের উদ্দেশে বলল “যাবে নাকি”?


আমি একটু ভয় পেলেও আমার দুজন বন্ধু বেশ হাসাহাসি করতে 
করতে আমাদের সাথে নিচে নামলো আর সেই মহিলাদের 
ব্যাপারটা খুলে বলল। আর এও বলল জিয়া উদ্যানে যে সকল 
মহিলারা এমন বোরকা পরে ঘোরাফেরা করে তারাও এমন টাইপের মানে সোজাসুজি বলতে গেলে “পতিতা”।

 সত্তিই তাই, জিয়া উদ্যানে সন্ধ্যার পর তাদের আনাগোনা দেখতাম। 
এখন ভার্সিটির বন্ধুদের সাথে মানিকমিয়া এভিনিউ মানে সংসদের দক্ষিন পাশে আড্ডা দেই, যায়গাটা বেশ ভালোই মানে পরিষ্কার পরিছন্ন আর আড্ডা ভালোই হয়। কিন্তু এখানেও খেয়াল করলাম এমন বেশ কিছু মহিলার আনাগোনা আর সেটা সন্ধ্যা বা রাতে না দিনদুপুরে!!

এমনকি পুলিশের সামনেই!!

 সত্যি কথা বলতে এই সকল মহিলাদের নিয়ে আমার মনে অনেক রকম প্রশ্ন ঘুরপাক খায় কিন্তু বলার সাহস পাইনা। এত এত পেশা থাকতে তারা কেন এই পেশায়?তাদের নিয়ে অনেক হাসাহাসি হয় এমনকি আমিও বাদ যাইনি, কিন্তু একটু গভির ভাবে ভাবতে গেলে হাসির কিছু পাই না!  

পথে নিরেট শরীরের টানে আসে যারা তারা উপর তলার নারী 
তারা পতিতা নয়, উপর শ্রেণির লোকেরা তাদের সোহাগ করে বলেসোসাইটি গার্ল অবশ্য এদেরকেও বেশী দোষ দেয়া ঠিক না কারণ তারাও আমাদের সমাজের পয়জন থেকে তৈরি
 হেমলক সমাজের ভুলভুলাইয়ার জালে ফেঁসে যাওয়া নারী এদের 
বেশিরভাগই প্রচণ্ড রকমের মেধাবী

সেলিব্রিটি সেজে বন্ধুদের টেক্কা দেবার বাসনায়, ভালো 
ইউনিভার্সিটিতে স্ট্যাটাস বজায় রাখার অভীপ্সায় কোনো কুক্ষণে এরা আলোর ঝলকানির মোহে পড়ে যায় প্রথমে নাইট বারে সীসা চিবিয়ে, তারপর নাইট ক্লাবের মদমত্ত জলসায় উদ্দাম ড্যান্স করে আস্তে আস্তে নামীও বন্ধুদের ফ্ল্যাট!!

 আরেক শ্রেণি আছে যাদের এই পেশায় আসার জন্য তাদের থেকে এই সমাজের 
দায় টাই বেশি। এদের সংজ্ঞাটা এমন

আমি আপনাকে নারী জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ দেবো বিনিময়ে আপনি আমাকে দুমুঠো ভাতের পয়সা দিতে পারবেন না?  

 স্বামীর সাথে ডিভোর্স,প্রেমিকের ফাদে পরে,আবার বিদেশে নিয়ে 
যাওয়ার নাম করে পতিতালয়ে বিক্রি এমন ঘটনাই বেশী শোনা যায়। আর পতিতালয়ে একবার বিক্রি হলে সেখান থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। কেও যদি অনেক কষ্টে বেরও হয় তখন তাকে আর তার পরিবার সামাজিকতার ভয়ে মেনে নেয়না;

শেষমেশ কোন উপায় না দেখে আবার সেই রাস্তায় নামতে হয়!! তাহলে এই মেয়েটার ভাগ্য এমন হওয়ার জন্য কে দায়ী??
অবশ্যই এই সমাজ কারন পৃথিবীতে কেও প্রতিতা হিসেবে জন্ম নেয়না
 

শহরে তো রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলে কেবল বাড়িওয়ালা আর ভাড়াটিয়াদের। এর বাইরে যে নারীই মাথা রাখে পিচ ঢালা পথের ফুটপাতে, কমলাপুর রেল স্টেশনে, সদরঘাটের পন্টুনে তাদের দায়িত্ব কে নিবে??


সবার মত আমিও জানি এই সকল পতিতাদের জন্য সমাজ কুলসিত হয় বা যুব সমাজের অবক্ষয় হয়। কিন্তু এদের মধ্যে বেশিভাগই এসেছে পেটের ক্ষুধায়, কে বা কারা তাদের ক্ষুধা নিবারণ করবে?

কেও যদি পতিতা হয়ে জন্ম না নিয়ে পতিতা হয়ে মৃত্যু বরন করে তাহলে দোষটা কার??